সোমবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৫, ০১:২০ পূর্বাহ্ন
সিএমপি পতেঙ্গা মডেল থানার অভিযানে আসমা আক্তার হত্যা মামলায় গ্রেফতার -১
ডেক্স নিউজ ঃ- সিএমপি মিডিয়া
মামলার বাদি মোঃ আলম পেশায় একজন রিক্সা চালক। প্রায় ১২ বছর পূর্বে বাদির ৩য় মেয়ে ভিকটিম মোছাঃ আসমা আক্তার গার্মেন্টসে চাকরি করার উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম শহরে আসেন। চাকরির সুবাদে বিবাদি কাজী সাহেদুজ্জামান রিমনের সাথে তার পরিচয় হয় এবং প্রায় ১১ বছর পূর্বে তাদের বিয়ে হয়। তাদের দাম্পত্য জীবনে ০৯ বছরের ১ টি ছেলে ও ০৩ বছর ১০ মাস বয়েসী ০২ টি কন্যা সন্তান রয়েছে।
১০/০৬/২০২৩ খ্রিঃ তারিখ বিকাল ০৫:৩০ ঘটিকায় বিবাদি তার মোবাইল নাম্বার থেকে বাদির মোবাইল ফোনে কল করে জানায় যে, বাদির মেয়ে ভিকটিম মোছাঃ আসমা তার বর্তমান ঠিকানার বাসায় গলায় ফাঁস দিয়েছে। বাদি উক্ত সংবাদ পেয়ে চট্টগ্রাম শহরে থাকা অপর মেয়ে রোকেয়াকে ফোন করে বিবাদির সাথে যোগাযোগ করে পতেঙ্গায় যেতে বলেন।
সন্ধ্যা অনুমান ০৬. ঘটিকায় বাদির মেয়ে রোকেয়া জানায় যে, ভিকটিমের মৃতদেহ ফুলে যাচ্ছে বিধায় বিবাদি মৃতদেহটি তার গ্রামের বাড়ি নিয়ে যাচ্ছে বলে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে তাকে জানিয়েছে। তারপর ঐ দিন রাত অনুমান ০৮.৩০ ঘটিকা পর্যন্ত বিবাদির সাথে বাদি ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের যোগাযোগ থাকলেও এরপর থেকে বিবাদি মোবাইল নাম্বার বন্ধ পাওয়া যায়। বিবাদির সাথে বাদি ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা যোগাযোগ করতে না পেরে বাধ্য হয়ে একপর্যায়ে ১২/০৬/২০২৩ খ্রিঃ তারিখ দিনের বেলায় চট্টগ্রাম শহরে আসেন।
বাদি তাঁর মেয়ের বর্তমান ঠিকানার বাসায় যান এবং জানতে পারেন যে লোকজন কাঁথা মোড়ানো অবস্থায় ভিকটিমের লাশ ভাড়াঘরে পড়ে থাকতে দেখেছেন এবং ভিকটিমের গলায় দাগ ছিলো বলে তারা জানান। পরবর্তীতে বিবাদি স্থানীয় একজন ডাক্তার নিয়ে আসলে ডাক্তার পরীক্ষা করে ভিকটিমকে মৃত ঘোষণা করেন। ফলে বিবাদি তার সঙ্গীয় লোকজনসহ লাশটি এম্বুলেন্সে উঠিয়ে তাদের গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যায়।
বিবাদির কথাবার্তায় ও ঘটনাস্থলে পৌঁছে খোঁজখবর নিয়ে বাদি এবং তার পরিবারের সদস্যদের ধারণা ১০/০৬/২০২৩ খ্রিঃ তারিখ বিকাল ০৫.৩০ ঘটিকার পূর্বে যে কোন সময় একই উদ্দেশ্যে বিবাদি তার সঙ্গীয় অজ্ঞাতনামাদের পরস্পর যোগসাজশে পতেঙ্গা মডেল থানাধীন উত্তর পতেঙ্গা পশ্চিম হোসেন আহম্মদ পাড়া খেজুরতলা জনাব আলী স্কুলের পিছনে রনির সেমিপাকা ভাড়াঘরের ০১নং রুমের ভিতর অজ্ঞাত কারণে ভিকটিমকে হত্যা করে লাশ গুম করার জন্য ‘রামগঞ্জ ০৩ কিলোমিটার লিখা’ মাইল ফলকের আগে ডানদিকে লোকাল রাস্তায় সামান্য গিয়ে একটি স্কুলের পাশে নিয়ে যায়। বাদির উক্তরুপ এজাহারের প্রেক্ষিতে সূত্রোক্ত মামলাটি রুজু হয়।
মামলার প্রেক্ষিতে জনাব শাকিলা সোলতানা, উপ-পুলিশ কমিশনার, বন্দর এর নির্দেশনায়, জনাব শরীফউজ্জামান, অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার, বন্দর এবং জনাব মোঃ আরিফ হোসেন, সহকারী পুলিশ কমিশনারের সার্বিক সহযোগিতায়, মামলার তদন্তকারী অফিসার এসআই শফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া সঙ্গীয় অফিসার ও ফোর্স সহ অভিযান পরিচালনা করে ১৪/০৬/২০২৩ খ্রিঃ নগরীর ইপিজেড থানাধীন কাজীগলি এলাকা থেকে মামলার ঘটনায় জড়িত ভিকটিমের স্বামী কাজী সাহেদুজ্জামান রিমনকে গ্রেফতার করেন।
উক্ত বিবাদির স্বীকারোক্তি ও দেখানো মতে একই রাতে তার বর্তমান ঠিকানার বাসা থেকে মামলার ঘটনায় ব্যবহৃত ০১টি লোহার বটিনা ও ০৫টি কালো সাদা রংয়ের রশির ছেঁড়া অংশ উদ্ধার করা হয়। বিবাদিকে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশক্রমে বিবাদিকে ০৪ দিনের পুলিশ রিমান্ডে আনা হয়।
রিমান্ডে থাকাকালে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে বিবাদি হত্যাকান্ডের কথা স্বীকার করে জানায় যে, ভিকটিম মারা গেলে সে লাশটি তার গ্রামের বাড়ি তথা লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ থানাধীন পশ্চিম কাদিরবিল মিজি বাড়ি কবরস্থানে কবর দেয়। পরবর্তীতে লাশ দাফন শেষে পুলিশের গতি বিধি লক্ষ্য করার জন্য পার্শ্ব ইপিজেড থানা এলাকায় আত্মগোপনে থাকাবস্থায় পুলিশ কর্তৃক ধৃত হয়।
পরবর্তীতে ১৯/০৬/২০২৩ খ্রিঃ তারিখ ১১.৫৫ ঘটিকার সময় বিবাদির দেওয়া তথ্য, স্বীকারোক্তি ও দেখানো মতে বর্ণিত কবরস্থান থেকে জনাব মনিরা খাতুন, সহকারী কমিশনার (ভুমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট, রামগঞ্জ, লক্ষ্মীপুর এর তত্ত্বাবধানে ভিকটিম মোছাঃ আসমা আক্তার এর গলিত লাশ উত্তোলন করা হয়। ভিকটিমের লাশ ময়না তদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে।