রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৪৯ অপরাহ্ন
করোনার দুঃসময়েও বিভেদ কেন?
#মনদীপ_ঘরাই
মনটা কয়েকদিন ধরে খুব খারাপ। রাতে রাতে ঘুম ভেঙ্গে যায়। কেমন যেন একটা থমথমে পরিবেশ। প্রতিদিন মৃত্যু সংবাদগুলো মনে দাগ কাটে। এর মধ্যেও আরেকটা ছোট কষ্ট বুকে বাসা বেঁধেছে। পিপিই বিতরণ ও ছবি পোস্ট করা নিয়ে নানান আলোচনা-সমালোচনা-বিদ্বেষ ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
শুরুটা বোধ করি নারায়নগঞ্জের সোনারগাঁও এর ইউএনও সাইদ স্যারকে দিয়েই। একটা ছবি পোস্ট করেছিলেন ফেসবুকে। উপজেলার অফিসাররা পিপিই পড়া। সেই সাথে দেখেছি পিরোজপুরের ভান্ডারিয়ার ইউএনও নবীন স্যারকে পিপিই বিতরণের ছবি দিয়েছেন।
এরপর আর দেখা-বোঝার সময় হয় নি কিছুই। কান পাতলে শুনেছি ভৎসনা, চোখ মেললে দেখেছি ট্রল আর বিদ্বেষমূলক সব কথা আর ছবি।
অভিযোগ একটাই: প্রশাসন সব পিপিই নিয়ে বসে আছে, ডাক্তাররা পায় নি।
যদিও প্রশাসন ক্যাডারের একজন সদস্যের কাছ থেকে কোন বক্তব্য কতটা গ্রহণযোগ্য হবে, তা জানি না। তবুও সত্যের পথে থাকার চেষ্টা করেছি এ যাবৎ, তাই নিজের কথাটুকু বলবো।
সোনারগাঁও, ভান্ডারিয়া, গোলাপগঞ্জ, ইন্দুরকানি, শরণখোলা উপজেলায় ইউএনও মহোদয়েরা প্রাণীসম্পদ অফিসারের কাছে রক্ষিত বার্ড ফ্লু এর সময়ে পাওয়া পিপিই সংগ্রহ করে বিতরণ করেছেন মূলত ডাক্তার-নার্সদের জন্য। শরণখোলা উপজেলা পরিষদের উদ্যোগে আলাদা করে ৯৫ টি পিপিই ক্রয় করা হয়েছে শুধুমাত্র ডাক্তার- নার্সদের জন্য। সোনারগাঁও এর যে ছবিটি ভাইরাল, সেই ছবিতেও পাঁচজন ডাক্তার রয়েছেন। এর বাইরেও ৩০ টি পিপিইর ১৪ টি শুরুতে ডাক্তার ও নার্সদের জন্য আলাদা করা ছিল। ভান্ডারিয়াতেও ডাক্তারদের বিতরণ করা হয়েছে পিপিই।
এই পিপিইর সন্ধান দেবার জন্য উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসারকে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন সব উপজেলা নির্বাহী অফিসার।
তাহলে দ্বন্দ্বটা কোথায়? অভিযোগ একটাই, ডাক্তারদের পর্যাপ্ত পিপিই নেই, প্রশাসনের সবার গায়ে পিপিই।
সত্যিই কী প্রশাসনের সবার গায়ে পিপিই? তাহলে এসিল্যান্ডদের তো দেখলাম শুধু মাস্ক কিংবা বেশি হলে একটা হ্যান্ডগ্লাভস পড়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করছে, মোবাইল কোর্ট করছে। ম্যাজিস্ট্রেট রিফাতকে দেখলাম সাধারণ পোশাকেই করোনার প্রথম মৃত্যুর লাশ দাফন করতে। সেগুলো তো নজরে এড়িয়ে গেছে অবলীলায়। আর যদি প্রশাসনের সবাই পিপিই পেয়ে থাকে, তাহলে আমার টা কোথায়?
এবার আসি চিকিৎসকদের প্রসঙ্গে। যে পিপিই নিয়ে কথা হচ্ছে, তা তো ছিল একটা বিকল্প ব্যবস্থা। কেন্দ্রীয়ভাবে পিপিইর কী ব্যবস্থা করা হচ্ছে, কতটা করা হচ্ছে এর সাথে লাইভস্টক বা পরিষদের উদ্যোগে কেনা পিপিইর সংযোগ একেবারেই নেই। ডাক্তারদের পর্যাপ্ত পিপিই অবশ্যই প্রয়োজন আছে, এবং সেটা সর্বাগ্রে। এমন কোন উপজেলা নির্বাহী অফিসার যদি থেকে থাকেন, যিনি ডাক্তারদের পিপিই না দিয়ে নিজে গায়ে জড়িয়েছেন, সেটা সামনে আনতে পারেন অবলীলায়। এটুকু সমালোচনা সহ্য করার মতো “মানুষ” নিশ্চয়ই আমরা।
প্রশাসন ক্যাডার নিয়ে এতকিছু লিখলাম, ডাক্তারদের বিষয়টা এড়িয়ে যাচ্ছি কী?
আমার আপন বড় বোন যশোর জেলার ডেপুটি সিভিল সার্জন। আজ সন্ধ্যায় ফোনে যখন কথা হলো, সে ও বললো, পিপিই নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে, খবর রাখিস?
খবর রাখি দিদি। ক্যান্সারের সাথে যুদ্ধ করে সুস্হ্য হওয়া তোমার ইমিউনিটি অনেক কম। তারপরেও ডিউটি করছো দিন-রাত। ডাক্তারদের একটা পিপিইর সঙ্কটও যেন না থাকে, সেটা মনে-প্রাণে চাই। কারণ, তোমরা সুরক্ষিত থাকলেই সুরক্ষা পাবে দেশের সবাই।তবে মনে রেখো, তোমাদের মতো প্রশাসন ক্যাডারের সবাইও কিন্তু এদেশেরই নাগরিক। ট্যাক্সের টাকায় আমাদের সবারই বেতন হয়। জাতীয় সঙ্গীত বেজে উঠলে সবাই একসুরেই গাই:
আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি।
আমাদের সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ভালো থাকুক মা বাংলাদেশ।